Saturday, 26 November 2016

অনুগল্প

দৃশ্য ১— গঙ্গার পাড়ের এই জায়গাটা বিকেলবেলায় বেশ ফাঁকা থাকে৷ সেইজন্য দিপুর কাছে প্রেম করার জন্য এটাই আদর্শ জায়গা৷ আজ ও দিপু আর অরুণিমা নদীর একটু দূরে মাঠটার ধারে বসেছিল৷ হঠাৎ কোত্থেকে তিনটে ছেলে অন্ধকার ফুঁড়ে উদয় হল, দিপুর মাথায় ভারী কিছু একটা দিয়ে অজ্ঞান করে দিয়ে অরুণিমাকে তুলে নিয়ে গেল৷
দৃশ্য২— অরুণিমা:— ' দিপু ছেলেটা ভালো, কিন্তু কেরাণীর চাকরীটা পাওয়ার পর থেকে বিয়ে করার জন্য ক্ষেপিয়ে দিচ্ছে৷ এদিকে বাবার আমার জন্য সেন আঙ্কল এর ছেলে গৌরবকে পছন্দ৷ গৌরব আগের ইয়ারেই আই আই টি থেকে পাশ করেছে৷ আর সেন আঙ্কল এর ও বিশাল ব্যবসা৷ কি-যে করি!দিপুকে বললে ও এমন সিন ক্রিয়েট করবে আমার কিম্বা গৌরবের বাড়ি গিয়ে যে সব ভেস্তে যাবে৷ গান্ডুটা স্যালারি পায় মোটে পনেরো হাজার৷ ধুস্! মাথাটা ধরে গেল৷
দৃশ্য ৩— জ্ঞান ফিরলে দিপু দেখল অরু পাশে নেই৷ মাথাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে যন্ত্রনায়৷ টলতে টলতে উঠে দাঁড়িয়ে নদীর দিকে এগিয়ে গেল ও৷ মনসা ঝোপটার পাশে অরুর ওড়নাটা পড়ে আছে৷ সন্ধের আবছা আলোতেও বিচ্ছিরি একটা অ্যাঙ্গেলে পড়ে থাকা ওর শরীরটা চিনতে পারল সে৷ সারা গায়ে রক্ত লেগে৷ মাথার বাঁ পাশ থেকে একটা রক্তের ধারা অনেকটা গিয়ে শুকিয়ে এসেছে৷ মাথাটা এখনও দপ্ দপ্ করছে দিপুর৷ তার মধ্যেও ওর ভাবতে সময় লাগল না৷ এগিয়ে গেল নদীর দিকে৷ তারপর একটা শব্দ, ঝুপ্ ! গঙ্গা আবার নিঃশব্দে বইতে লাগল৷
দৃশ্য ৪— দিপুর শরীরটা নদীতে মিলিয়ে যাবার পর অরুণিমা উঠে বসল৷ তারপর নদীর থেকে জল নিয়ে গায়ে লেগে থাকা টম্যাটো সস্ আর আলতার মিশ্রণটা তুলতে লাগল৷ অরুণিমা জানে যে দিপু সাঁতার জানে না৷ এই ছোট্ট নাটকটা তাকে করতেই হত৷ দিপু তাকে কখনোই ছাড়ত না৷ আর যতই হোক দিপু কোনোদিনই গৌরব এর নখের যোগ্য হতে পারত না৷
—দিস ইজ রিয়েলি ইনসেন!...গলায় রাগ ঝরে পড়ল রীজকা'র৷
ওরা যখনই আমাদের ঘরের সামনে আসবে আমাদের ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হবে, ওরা যা করছে তাই করতে হবে, ইভেন মুখে ওইসব রংচং মাখলে আমাদেরকেও তা মাখতে হবে! এটা কিরকম আবদার?
—এটাই তো নিয়ম রীজকা৷ ওরা না থাকলে তো আমরাও থাকব না৷...ওর দিদি কাপিদী বলল৷
—জানি৷ বাট একবার ওদেরকে শিক্ষা দিতে চাই একটু৷ একবার ওরা এলেও আমরা দাঁড়াব না৷ প্লিজ দিদি, প্লিজ!
.................................
সেদিন দুপুরে কাজরী আয়নায় নিজের বদলে ওর দিদি দীপিকা'র মুখ দেখে ভয়েই মরে আর কি!
................................
আয়নার ভেতরে দুই বোন তখন হেসে কুটোপাটি৷
পাক্কা তিনটে শিশি ব্রেনোলিয়া খেয়ে পঞ্চমবাবুর কথাটা মনে পড়ল রুবি রায়ের৷ ওরকম একদিন সবাই তাকে নিয়ে কবিতা করেছে৷ অতশত মনে রাখলে চলে নাকি!

Monday, 21 November 2016

রোজ রাত্রে সদানন্দবাবু ব্যাটম্যান হয়ে ওঠেন৷ আজ সাত বছর ধরে হয়ে আসছেন৷ অবশ্য তাঁর এই ডুয়েল আইডেন্টিটির ব্যাপারটা তাঁর স্ত্রী ও জানেন না৷ সুপারহিরোদের এমনটাই দস্তুর কিনা৷ রোজ যে সমস্ত অন্যায়, দুর্নীতি বা অপরাধের ঘটনা তাঁর গোচরে আসে ব্যাটম্যান হয়ে চেষ্টা করেন তা নিবারন করতে৷ এভাবে সাত বছরে অনেক সমস্যার সমাধানেই তাঁর হাত আছে৷
আজও রাত দেড়টা বাজতেই পকেট থেকে তাঁর অস্ত্রটা বার করলেন সদানন্দবাবু৷ আর কিছুক্ষনের মধ্যেই তাঁর সাড়ে চার হাজার ফ্রেন্ড ও আঠারো লক্ষ ফলোয়ার্স এর ফেসবুকে নোটিফিকেশন চলে গেল 'ব্যাটম্যান ইজ সিকিং জাসটিস্ ফর দ্য পার্ক স্ট্রীট রেপ ভিকটিম উইথ সিক্সটি নাইন আদার্স'৷
ফোনটাকে এইসময় ব্যাটমোবিলের চেয়ে কোনো অংশে কম মনে হয় না তাঁর৷

Sunday, 20 November 2016

শাহজাহানের প্রেম

বড় রাস্তার থেকে ছোট রাস্তা, ছোট রাস্তা থেকে গলি, গলি পেরিয়ে তস্য গলি৷ আর তস্য গলির ধারে একতলা ঘর৷ আকাশী রঙ৷ বাগানের অভাবে ছাতের টবে সূর্যমুখী আর গাঁদা৷ ছাতের দক্ষিণ কোনে মাদুর , মাদুরের ওপর শাহজাহানবাবু, আধশোয়া৷ অঘ্রানের হালকা শীতে ফতুয়ার সাহসে বুক চিতিয়ে৷ কোলবালিশের ওপর বেগুনীর বাটি৷
ঠিক আড়াই নম্বর বেগুনিটাতে কামড় দিতেই মানবেন্দ্রবাবু ঢুকলেন৷ মানবেন্দ্রবাবুর ভনিতা পোষায় না৷ এসেই বসলেন হারমোনিয়াম নিয়ে৷ "আমি ফিরি পথে তাহে কার ক্ষতি, তব চোখে কেন সজল মিনতি,আমি কি ভুলেও কোন দিনও এসে দাঁড়ায়েছি তব দ্বারে.......৷" সে কি আর্তি গলায়৷ সন্ধ্যে গাঢ় হতে মান্নাবাবু এলেন৷ তাঁর দেড়খানা গানের মাথায় ব্যালকনিতে উত্তমবাবু অস্থিরভাবে পায়চারি শুরু করলেন৷ শাহজাহানবাবু কোলবালিশের জিন্মায় সঁপে দিলেন নিজেকে৷ গাঁদাফুলের গন্ধ মিঠে হয়ে জড়িয়ে ধরতে থাকল৷ শাহজাহানবাবু জানেন এইসময় সহজে ভিজতে নেই৷ হালকা করে ভেসে যেতে হয়৷ "লেভিটেশন একটা স্টেট অফ মাইন্ড রে পাগলা"..৷ গঙ্গার ধারে প্রথমবার মদের গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে সত্যদা কথাগুলো বলেছিল৷ সেদিন পাননি৷ আজ টের পেলেন ব্যাপারটা৷
পরের পেয়ালাটা হেমন্তবাবু ধরিয়ে দিলেন৷ "ওগো কাজল নয়না হরিণী, তুমি দাওনা ও দুটি আঁখি৷ ওগো গোলাপ পাপড়ি মেলো না, তার অধরে তোমাকে রাখি.....৷" উত্তমের পায়চারি শান্ত হয়ে এল৷ ছাতের দরজা খুলে মমতাজ বেগম ঢুকলেন৷ হলদেপাড় শাড়ি৷ শাহজাহানবাবু চোখ বন্ধ করলেন৷ বুকে সুচিত্রার ঠোঁটের তিরতিরে কাঁপুনি৷ নবাবের বিচলিত হওয়া সাজে না৷ তিনি জানেন প্রেম পেলে কাছে ডাকতে নেই৷ কাছে আসতে দিতে হয়৷ মমতাজ বেগম সূর্যমুখীর পাতার গায়ে হাত বোলান৷ সেদিকে আড়চোখে একবার তাকিয়ে নেন শাহজাহান৷ বেগতিক বুঝে উত্তমবাবু ইজিচেয়ারে ঘুমিয়ে পড়লেন৷ হারমোনিয়াম ছেড়ে হেমন্তবাবু পালাবার পথ পান না৷ বেগমের অবশ্য হারমোনিয়াম লাগে না৷ "লাগ যা গলে কি ফির ইয়ে হাসিন রাত হো না হো৷ শায়েদ ইস জনম মে মুলাকাত হো না হো৷...." বাদশাহ্ এর বুকে ঢিপঢিপ, নিঃশ্বাসে ছানার পায়েসিয় ঘনত্ব৷ বেগমের আঁচলের আলতো ছােঁয়া লাগে গায়ে৷ নবাব আর চুপ থাকতে পারেন না৷ "হামকো মিলি হ্যায় আজ ইয়ে ঘড়িয়া নসীব সে৷ জি ভর কে দেখ লিজিয়ে........৷"
শাহজাহানবাবু কখনো দিল্লী দেখেননি, কিন্তু সন্ধ্যের এই সময় তাজমহল তাঁর একতলার ছাতের অনেক কাছে চলে আসে৷