Sunday, 20 November 2016

শাহজাহানের প্রেম

বড় রাস্তার থেকে ছোট রাস্তা, ছোট রাস্তা থেকে গলি, গলি পেরিয়ে তস্য গলি৷ আর তস্য গলির ধারে একতলা ঘর৷ আকাশী রঙ৷ বাগানের অভাবে ছাতের টবে সূর্যমুখী আর গাঁদা৷ ছাতের দক্ষিণ কোনে মাদুর , মাদুরের ওপর শাহজাহানবাবু, আধশোয়া৷ অঘ্রানের হালকা শীতে ফতুয়ার সাহসে বুক চিতিয়ে৷ কোলবালিশের ওপর বেগুনীর বাটি৷
ঠিক আড়াই নম্বর বেগুনিটাতে কামড় দিতেই মানবেন্দ্রবাবু ঢুকলেন৷ মানবেন্দ্রবাবুর ভনিতা পোষায় না৷ এসেই বসলেন হারমোনিয়াম নিয়ে৷ "আমি ফিরি পথে তাহে কার ক্ষতি, তব চোখে কেন সজল মিনতি,আমি কি ভুলেও কোন দিনও এসে দাঁড়ায়েছি তব দ্বারে.......৷" সে কি আর্তি গলায়৷ সন্ধ্যে গাঢ় হতে মান্নাবাবু এলেন৷ তাঁর দেড়খানা গানের মাথায় ব্যালকনিতে উত্তমবাবু অস্থিরভাবে পায়চারি শুরু করলেন৷ শাহজাহানবাবু কোলবালিশের জিন্মায় সঁপে দিলেন নিজেকে৷ গাঁদাফুলের গন্ধ মিঠে হয়ে জড়িয়ে ধরতে থাকল৷ শাহজাহানবাবু জানেন এইসময় সহজে ভিজতে নেই৷ হালকা করে ভেসে যেতে হয়৷ "লেভিটেশন একটা স্টেট অফ মাইন্ড রে পাগলা"..৷ গঙ্গার ধারে প্রথমবার মদের গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে সত্যদা কথাগুলো বলেছিল৷ সেদিন পাননি৷ আজ টের পেলেন ব্যাপারটা৷
পরের পেয়ালাটা হেমন্তবাবু ধরিয়ে দিলেন৷ "ওগো কাজল নয়না হরিণী, তুমি দাওনা ও দুটি আঁখি৷ ওগো গোলাপ পাপড়ি মেলো না, তার অধরে তোমাকে রাখি.....৷" উত্তমের পায়চারি শান্ত হয়ে এল৷ ছাতের দরজা খুলে মমতাজ বেগম ঢুকলেন৷ হলদেপাড় শাড়ি৷ শাহজাহানবাবু চোখ বন্ধ করলেন৷ বুকে সুচিত্রার ঠোঁটের তিরতিরে কাঁপুনি৷ নবাবের বিচলিত হওয়া সাজে না৷ তিনি জানেন প্রেম পেলে কাছে ডাকতে নেই৷ কাছে আসতে দিতে হয়৷ মমতাজ বেগম সূর্যমুখীর পাতার গায়ে হাত বোলান৷ সেদিকে আড়চোখে একবার তাকিয়ে নেন শাহজাহান৷ বেগতিক বুঝে উত্তমবাবু ইজিচেয়ারে ঘুমিয়ে পড়লেন৷ হারমোনিয়াম ছেড়ে হেমন্তবাবু পালাবার পথ পান না৷ বেগমের অবশ্য হারমোনিয়াম লাগে না৷ "লাগ যা গলে কি ফির ইয়ে হাসিন রাত হো না হো৷ শায়েদ ইস জনম মে মুলাকাত হো না হো৷...." বাদশাহ্ এর বুকে ঢিপঢিপ, নিঃশ্বাসে ছানার পায়েসিয় ঘনত্ব৷ বেগমের আঁচলের আলতো ছােঁয়া লাগে গায়ে৷ নবাব আর চুপ থাকতে পারেন না৷ "হামকো মিলি হ্যায় আজ ইয়ে ঘড়িয়া নসীব সে৷ জি ভর কে দেখ লিজিয়ে........৷"
শাহজাহানবাবু কখনো দিল্লী দেখেননি, কিন্তু সন্ধ্যের এই সময় তাজমহল তাঁর একতলার ছাতের অনেক কাছে চলে আসে৷

No comments:

Post a Comment